নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নেতারা অন্য নামে এসে শর্ত পূরণ করলে নিবন্ধন পাবে। নিবন্ধনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে পাবে না।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে জবাবে কাছে তিনি এমন কথা বলেন। এর আগে আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারোনো ‘জামায়াত’ নেতারা বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে ইসিতে।
এ বিষয়ে পরে সাংবাদিকরা কথা বলেন এ নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে। সেখানে তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, আদালত একটি দলের নিবন্ধন বাতিল করেছেন, এজন্য তারা অন্য নামে আবেদন করেছে, সেক্ষেত্রে নিবন্ধন পাবে কি না। এর প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, এটি যদি জামায়াতে ইসলামী হয়, তবে কোর্টের আদেশে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এখন যদি কেউ আমাদের কাছে নিবন্ধিত হতে চায়, তাকে নতুন দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে হলে যে শর্তগুলো পূরণ করা প্রয়োজন, সেগুলো পূরণ করলে নিবন্ধন পাবে। শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হলে পাবে না।
নাম পাল্টালাম কিন্তু ব্যক্তি একই থাকলো, তাহলে নিবন্ধন পাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে কারণ আমাদের সংবিধান ও মক্তিযুদ্ধর সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এজন্য বাতিল করা হয়েছে। এখন যদি কেউ এসে আমাদের সাংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, যদি কেউ যুদ্ধাপরাধী না থাকে এবং নিবন্ধনের সব শর্ত যদি পূরণ করে, তাহলে তো আর বলতে পারছেন না যে ওই জামায়াত, এই জামায়াত এক। ওখানে (আইনে) তো বলা আছে কে কে নিবন্ধন পাবে। যেমন, কেউ যদি বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, দেখা গেল গঠণতন্ত্রে এমন একটা ধারা আছে, উদ্দেশ্য আছে; যা আমাদের সংবিধানের সঙ্গে ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সাংঘর্ষিক, তাহলে তো পাবেন না।
এখন যদি জামায়াতের কেউ এসে অন্য নামে নিবন্ধন চায় তাহলে পাবে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, দেখতে হবে উনি যুদ্ধাপারধী ছিলেন কি না, মামলা আছে কি না, যে যে শর্ত আছে, সেগুলোর মধ্যে যদি একজনও পড়ে, তাহলে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই।
কেউ আগে জামায়াতের রাজনীতিতে ছিল, সে যদি নতুন দল করতে চায় সেটা পারবে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে তো জামায়াত আর করছে না। একটা জিনিসি বুঝতে হবে। যেমন, আমাদের অনেক দল এক সময় একটা রাজনৈতিক দল করত। ওই দল তিনি ত্যাগ করেছেন, করে আবার অন্য একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছে। অথবা একটা দল আগে একটা নামে ছিল, পরে ওই রাজনৈতিক দল নাম পরিবর্তন করেছে। এমন হয়েছে বাংলাদেশে। অনেক দলই এমন হইছে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ভেঙে গেছে, ভেঙে গিয়ে আরেকটা দল গঠন করেছে। মনে করেন একটা দল ‘জেড’ দল ছিল, ভেঙে যেয়ে ‘ওয়াই’ দল গঠন করেছে। ওই দলকে তো আর আগের দল হিসেবে বলার সুযোগ নাই। তবে দেখতে হবে তাদের ব্যক্তিগত কোনো ই… (শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয় এমন কিছু) আছে কি না।
তিনি বলেন, জামায়াত হিসেবে আসার সুযোগ নাই। মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের চেতনার বাইরে যদি কোনো দলের চেতনা থাকে গঠতন্ত্রে, তাহলে তাকে নিবন্ধন দেওয়ার তো কোনো সুযোগই নেই। যে-ই আসবে, স্বাধীনতায় বিশ্বাস থাকতে হবে, তাকে মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় ও সংবিধানের চেতনায় সম্মান থাকতে হবে। যদি বলে যে নারী নেতৃত্ব থাকবে না, তাহলে কী দেওয়ার সুযোগ আছে? কারণ বলাই তো আছে, সংবিধানেও বলা আছে নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য করা যাবে না, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো রাজনৈতিক বৈষম্য করা যাবে না। এসব থাকলে নিবন্ধন দেওয়া যাবে না।
নিবন্ধন বাতিল হওয়া ফ্রিডম পার্টির নেতারা কী পারবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ফ্রিডম পার্টিতে যারা আছেন তারা তো বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত, তারা তো পলাতক, তাদের তো রাজনীতি করারই কোনো অধিকার নাই। নিবন্ধন কীভাবে পাবে?