জাকারিয়া আল মামুন
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মাজুখান গ্রামের মোঃ আক্তার হোসেনের(৩৭) এক মাত্র পুত্র হাফেজ মোঃ তাওহিদ(১৭)। সে গত ০২ জুলাই রবিবার বিকাল আনুমানিক ৫ ঘটিকার সময় কাজের সন্ধানে ফুলদি বাঘপাড়া গ্রামের ঠিকাদার মোঃ হোসেনের কাছে যায়।
সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ফুলদি বাজারে পৌঁছালে আজমাইল সরকারের ছেলে জীবি খাঁন(১৮), সুরুজ আলী সরকারের ছেলে সৈরভ(১৯) এবং মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে ইমরানের সাথে রাস্তায় অটোরিকশায় দেখা হয়।
তারা সবাই জীবি খাঁনের অটোরিকশা করে বাড়িতে যাওয়ার সময় তাওহীদের সাথে সৌরভ ও ইমরানের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাওহিদকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে মাথার পিছনে আঘাত করে কাটা রক্তাক্ত গুরুতর জখম করলে তাওহিদ জ্ঞান হারায়। সৌরভ ও ইমরান তাকে ধাক্কা দিয়ে স্থানীয় মনিরের দোকানের সামনে ফেলে দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়ে। আনুমানিক সন্ধ্যা ৭ টার দিকে স্থানীয় টাইলস মিস্ত্রি ছাত্তার(২৩) তাওহিদকে রাস্তার পার্শ্বে পরে থাকতে দেখে তাওহিদের চাচা আসাদুজ্জামানকে(২৭) ফোন দেয়। আসাদুজ্জামান দ্রুত মনিরের দোকানের সামনে গিয়ে দেখে প্রমুখ ব্যক্তিরা তাওহিদকে রিকশায় করে ছৌল্লার মোড় শফিকের ফার্মাসিতে নিয়ে যায়। তখন তাওহিদের কান ও মাথার পিছন দিক থেকে অঝোরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার অবস্থার অবনতি এবং রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
পরে এম্বুলেন্স যোগে তাকে রাত ৯:৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত ১২:৪৫ মিনিটে তার অবস্থার বেগতিক দেখে আইসিও তে নেয়া হয় এবং ঐ রাতেই আনুমানিক ৩:০০ঘটিকার সময় কর্তব্যরত ডাক্তারা তাওহিদকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ ময়না তদন্তের পর কালীগঞ্জ থানাকে বিষয়টি অবগত করার পর ৩ জুলাই সোমবার রাতে এশার নামাজের পর বাইতুর রহমান জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজার শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় কথাকাটাকাটির জের ধরে তাওহিদকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে তাওহিদকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়। জীবি, সৈরভ এবং ইমরান।
তারা আরো জানান, সোমবার বিকেলে কালীগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল ও অভিযুক্তের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।
দোকানদার মনির জানান মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে দোকানের সামনের দিক বন্ধ করে পিছনদিক দিয়ে বের হয়ে এসে আওয়াল নামক এক ব্যক্তির টর্স লাইটের আলোয় একজনকে রাস্তার দক্ষিণপাশে পড়ে থাকতে দেখে উঠিয়ে মনিরের সহযোগিতায় দোকানের বেঞ্চে রেখে মাথায় পানি দেওয়া হয় এবং চোখ মেলার পর জৈনিক ব্যক্তিরা ছৌল্লার মোড় শফিকের ফার্মাসিতে নিয়ে গেলে দোকানদার মনির ও আউয়াল নামাজ আদায় করতে মসজিদে চলে যায়। ঐ দোকানের সামনে কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে একাধিক স্থানীরা জানায়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সৌরভের(১৯) কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হলে সে জানায় তাওহিদ কাজের খবর নিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে ফুলদি বাজারে পৌঁছালে রাস্তায় অটোরিকশায় দেখা হয়া। কিন্তু কোন প্রকার কথা কাটাকাটি বা মারামারির ঘটনা ঘটেনি। তাওহিদ অটোরিকশার পিছনে ডান দিকে বসা ছিল এবং বাকিরা সামনে বসা ছিল। তাওহিদ বারবার মাথা অটোরিকশার বাহিরে বের করছিল। হঠাৎ সামনের দিক থেকে একটি দ্রুতগামী সিএনজি তাওহিদের মাথায় আঘাত করলে সে রাস্তায় পরে যায়। কিন্তু তাদের অটোরিকশাটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকার কারনে অনেক সামনে চলে আসে পরে গাড়ি ঘুরিয়ে পিছনে তাওহিদের খোঁজে আসলে কিছু রাস্তা আসার পরে রাস্তায় অনেক মানুষ তাওহিদকে অন্য আরেকটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যেতে দেখে ভয়ে স্থান ত্যাগ করে চলে আসে।
তাওহিদের জানাজার নামাজে শরিক হয়েছিল কিনা এ প্রশ্নের জবাবে সে আমাদের জানায় পুলিশের ভয়ে তারা কেউই জানাজার নামাজে আংশ নেয় নি। অভিযুক্ত জীবি খাঁন ও ইমরানকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি এবং মোবাইল নাম্বারও পাওয়া যায় নি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা সহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জন বর্তমানে তাওহিদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ভাবে ভয়-ভীতি সহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
নিহত তাওহিদের স্বজনরা বলেন, অভিযুক্তরা মারধরের পর তাওহিদ অজ্ঞান হলে তাকে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়। তাদের মারধরের কারণেই তাওহিদের মৃত্যু হয়েছে। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
তাওহিদের পিতা আক্তার হোসেন জানান আমার পুত্রের মতো কারো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। প্রশাসনের কাছে দাবি উপযুক্ত তদন্ত পূর্বক পরিকল্পিত হত্যার রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, বুধবার নিহতের বাবা বাদি হয়ে কালিগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগ প্রেক্ষিতে আমি সহ সঙ্গীও ফোর্স নেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।