নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অমানবিক নির্যাতনের শিকার যশোর জেলা ছাত্র দলের যুগ্ম সম্পাদক হাশেম আলী দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে হাশেমের মৃত্যু রোগ প্রক্রিয়ার অস্বাভাবিক ছিল বলে দাবি করেছেন দলীয় নেতা কর্মীরা। তাদের দাবি- একটা সময় সে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিলেন। এই সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে সে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় এবং সর্বশেষ ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৩ বছর। হাশেম আলী যশোর সদর উপজেলা শ্রীপদ্দী গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের কনিষ্ঠ পুত্র। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাড়িতে ছুটে যান বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। হাশেম আলীর বৃদ্ধ মা রমিছা বেগম ও পরিবারের সদস্যরা জানান, বিগত স্বৈরাচর আওয়ামী সরকারের আমলে ২০১৩ সালে ছাত্রদল করা ও গ্রাম থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় এলাকার বালি খেকো নামে পরিচিত শ্রীপদ্দী গ্রামের নজর আলী খোকা বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দিয়ে হাশেম আলীকে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। হাশেম আলীর ভাইপো জিহাদ হোসেন আরো জানান, নজর আলী খোকার ভগ্নিপতি আওয়ামী সন্ত্রাসী চাউলিয়া হাইওয়ে তৈলপাম্প সংলগ্ন সাহাবাটি গ্রামের শাহাবুদ্দিনের বাড়িতে হাশেম আলীকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বাড়িতে আগেই অবস্থান করছিল নরেন্দ্রপর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কাশেম বিশ্বাস, নজর আলী খোকা, চাউলিয়া গ্রামের যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান ভুট্ট, একই গ্রামের অপর দুই যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন আলম ও রিপন হোসেন। শাহাবুদ্দিনের বাড়িতেই তারা সবাই মিলে হাশেম আলীকে অমানবিক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে সংবাদ পেয়ে হাশেম আলীর বৃদ্ধ মা ছুটে যান ওই বাড়িতে। সেখানে কাশেম বিশ্বাস ও শাহাবুদ্দিনের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে ছেলেকে ছেড়ে দিতে বলেন। বৃদ্ধ মায়ের কথায় কর্ণপাত না করে আরো বেশি নির্যাতন করে হাশেম আলীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তিনি আরো বলেন, এসব কথা শোনার পর বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত পরিবারের সকলকে ধৈর্য্য ধারন করতে বলেন ও সব ধরনের আইনের সাহায্য প্রদানের নিশ্চয়তা দেন। সেই থেকে হাশেম আলী সব সময় অসুস্থ। তার নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক মিথ্যা অভিযোগের মামলা থাকার কারনে পালিয়ে বেড়াতে হত। সে কারণে চিকিৎসা নিতে পারেননি। আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২২ সেপ্টেম্বর তাকে যশোরের দড়াটানা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা পিজি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তারপর শরীরের অবস্থা আরো অবনতি হলে ঢাকা ল্যাব এইডে। ভর্তির পর সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৩ অক্টোবর রোববার বেলা সাড়ে ১২ টায় মৃত্যুবরণ করেন।যশোরের মরদেহ আসার পর তার বাড়ি যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং পরিবারের সকলের প্রতি সমবেদনা জানান। হাশেম আলীর নামাজে জানাজা গতকাল সোমবার সকাল ১১ টায় শ্রীপদ্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। হাশেম আলী মৃত্যুকালে বৃদ্ধ মা, ৪ ভাই ২ বোনসহ অসংখা গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এই বিষয়ে যশোর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম টিপু জানান, হাশেমের রোগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ছিল না। একটা সময় সে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিলেন। সে জেল থেকে বের হবার পর শারীরিকভাবে নানান জটিলতায় ভুগছিলেন। হাশেমের এমন মৃত্যু কোন ভাবেই কাম্য নয়। হাশেমের উপর যারা নির্যাতন-নিপীড়ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই। যেটা হাশেমের পরিবারেরও কাম্য। এই বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটির সদস্য মারুফুল ইসলাম (সাবেক পৌরসভা মেয়র) বলেন, হাসেম খুব নির্যাতিত নিপীড়িত ছাত্রনেতা ছিল। হাশেমের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে অবিলম্বে হাশেমের নির্যাতনকারীদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানাই।