নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীর শিবপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সৎমা মা কোহিনুর বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে শফিউল আলম (৪০) নামে এক । এসময় মা, বোনকে বাঁচাতে এগিয়ে সৎবোন তনিমা আক্তার স্বর্ণা (২৪) ও মামা সজল মিয়াকে মারধোর করা হয় এবং স্বর্ণা গলা থেকে এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে শফিউল আলমের সৎমামা মো. সজল মিয়া শিবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে যা পরে মামলায় রুজু করা হয়। থানায় মামলা হিসেবে রুজু করা হলে সোমবার (২৭ মার্চ) শফিউল আলমকে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে সে জেল হাজতে আছে।
গ্রেফতারকৃত শফিউল আলম শিবপুর উপজেলার সৈয়দনগর দড়িপাড়া গ্রামের এ কে এম সহিদুর রহমানের ছেলে।
জানা যায়, শফিউলের বয়স যখন ১০ বছর তখন তার মা মারা যায়। মায়ের মৃত্যূর পর সহিদুর রহমান পলাশ উপজেলার চলনা গ্রামের আ: ছাত্তার মিয়ার মেয়ে কোহিনুর বেগমকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে কোহিনুর বেগম শফিউলকে মাতৃ স্নেহে বড় করে তুলেছে। প্রায় ৩০ বছর ধরে কোহিনুর বেগম মাতৃহারা শফিউলকে মায়ের আদর, স্নেহ ও ভালবাসা দিয়ে গেছে। তার সেই আদর ভালবাসা পাষন্ড শফিউল মানুষ করে তুলতে পারেনি।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, শফিউল আলম তার বৃদ্ধ অসুস্থ পিতা এ কে এম শহিদুর রহমানের ভরণ-পোষণসহ খোঁজখবর না নিয়ে তার সম্পত্তি ভোগ দখল করে যাচ্ছে। শফিউল ৪ বছর আগে তার বৃদ্ধ পিতা একা পেয়ে সকল সম্পত্তি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এতে রাজি না হলে সে তার বৃদ্ধ পিতাকে মারধোর শুরু করে এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর পিতার এই অসুস্থতার সুযোগে কৌশলে লিখে নিয়ে তাদেরকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। পরে নরসিংদীর বিজ্ঞ আদালতে সিআর মামলা নং-৬৭/১৮ এবং ৫৬/১৯ দায়ের করেন তার পিতা শহিদুর রহমান। যাহা বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধিন রয়েছে। এদিকে বাড়ী-ঘর থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তার পিতা সহিদুর রহমান মাথায় রক্তক্ষরণ হয়ে প্যারালাইসিস অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে।
শফিউলের অসুস্থ বাবা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে গত ১৭ মার্চ শিবপুর থানার সৈয়দনগর দড়িপাড়া বাড়ীতে গেলে শফিউল তার সৎমা কোহিনুর বেগমের সাথে বাক-বিতান্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে তার ৩/৪ জন সহযোগীকে সাথে নিয়ে মা কোহিনুর আক্তারকে মারধোর শুরু এসময় তার ছোট বোন তনিয়া আক্তার স্বর্ণা ও মামা সজল মিয়া এগিয়ে আসলে শফিউলের সহযোগীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। শুধু তাই নয় তনিয়া আক্তারের গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইনও ছিনিয়ে নেয় তারা। এক পর্যায় শফিউল তার সৎমা কোহিনুর বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো দা দিয়ে মাথায় কোপ দিলে গুরুতর আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সজল মিয়া বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করলে থানা পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে তা মামলা হিসেবে রুজু করে। পরে গত গত সোমবার রাজধানী ঢাকার গুলশানস্থ ই-ডট কম কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এরপর দিন তাকে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। শফিউল আলম বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।
শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ফিরোজ সালাউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন অভিযোগের পরপর তদন্তে নামে শিবপুর থানা পুলিশ। তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিললে তা নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করা হয় পরে ঢাকা থেকে আসামিকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে শিবপুর থানা পুলিশ