বৈদেশিক মুদ্রা ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় এলসি(ঋণপত্র) খুলছে না ব্যাংকগুলো। ফলে তেলের অভাবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না কেন্দ্রগুলো। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে আগামীতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই আসছে রমজান মাসকে লোডশেডিং মুক্ত রাখতে হলে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য জরুরি ডলার সহায়তা প্রয়োজন।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা জানান দেশের বিদ্যুৎ খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিআইপিপিএ সভাপতি ফয়সাল করিম।
বৈঠকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের এলসি খুলতে ডলার সহায়তার জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইপিপিএ সভাপতি ফয়সাল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জ্বালানি তেল আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছি না। ডলার সংকটের কারণে স্থানীয় ব্যাংকগুলো এলসি খোলার জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিতে পারছে না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সহায়তা চেয়েছি। কারণ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি করা প্রয়োজন তা পারছি না।
উদাহরণ দিয়ে বিআইপিপিএ সভাপতি বলেন, সামিট পাওয়ার তেল আমদানির জন্য প্রতি মাসে তিনটি এলসি খুলে থাকে, চলতি মাসে ২টি এলসি খুলতে পারলেও আরেকটি খুলতে পারিনি। এমন ঘটনা সবার ক্ষেত্রেই ঘটছে। প্রতি মাসে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল আমদানি করতে হয়। এলসি খোলার পর তেল দেশে আসতে ৪০ দিনের মতো সময় লাগে। আগামী মাসের শেষের দিকে রোজা শুরু। এখন যদি ২০০ মিলিয়ন ডলার সাপোর্ট পাওয়া যায় তাহলে রমজানে আশা করছি লোডশেডিং মুক্ত রাখতে পারবো।
পর্যাপ্ত তেল না পেলে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা থাকবে বলেও জানান বিদ্যুৎ খাতের এ উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংক কি আশ্বাস দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সবসময় সাপোর্ট দিয়ে আসছে। তবে এখন খাদ্য আমদানি নিশ্চিতসহ আরো বেশ কয়েকটি বিষয় দেখতে হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় আমাদের বিষয়টিও বিবেচনা করবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে বিআইপিপিএ'র পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় তেল আমদানি করতে না পারায় অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে লোডশেডিংয়ের মধ্যে পড়তে হবে। তাই তেল আমদানির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জরুরি ডলার সহায়তা চায় সংগঠনটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈঠক হয়েছে, তবে আলোচনার বিস্তারিত জানি না। তাই বলা সম্ভব না।
প্রতি মাসে দেশে এখন গড়ে যে পরিমাণ রপ্তানি ও প্রবাসী আয় আসছে, তার চেয়ে আমদানি খরচ কম হচ্ছে। এরপরও সংকট রয়ে গেছে। কারণ, আমদানির জন্য বিদেশি ব্যাংকগুলো আগে যে অর্থায়ন করেছে, তার দায় এখন শোধ করতে হচ্ছে। আবার সরকারি-বেসরকারি খাতে ঋণ পরিশোধ, বিদেশি কোম্পানির মুনাফা প্রত্যাবাসন, বিমানভাড়া, চিকিৎসাসেবাসহ নানা খরচ রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৯২০ কোটি বা ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এই পরিমাণ ডলার বিক্রি করেনি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময় রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতি ডলার ১০২ টাকা দামে বিক্রি করছে। আর ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারকদের কাছে প্রতি ডলার বিক্রি করছে ১০২ টাকায়। প্রবাসী আয় কিনছে ১০৭ টাকায়। ফলে আমদানিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১০৫ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। তবে এর ৮ বিলিয়ন ব্যবহারযোগ্য নয়। ২০২১ সালের আগস্টেও রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।