আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।
সমুদয় বিল উত্তোলনের ৩ বছরেও কাজ শুরু হয়নি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আফসার উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মান কাজ।
জানা গেছে, উপজেলা সদরের টংভাঙ্গা ইউনিয়নের গেন্দুকোরী এলাকার শিক্ষার মান উন্নয়নে ১৯৯৯ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে আফসার উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি এক একর ৪৮ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বিশাল খেলার মাঠ আর পাঠদানের জন্য একাডেমিক আধা পাকা ঘর রয়েছে। সেখানে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। বিদ্যালয়টির কারনে এলাকার শিক্ষার মানও বেড়েছে চোখে পড়ার মত। চলতি মাসে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত করে সরকার।
বিশাল জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও বাউন্ডারী ওয়াল না থাকায় খেলার মাঠে এক পাশের প্রায় ৩৩ শতাংশ জমি জবর দখল করে বাড়ি আর মার্কেট করেছেন স্থানীয় আতাউর রহমান মিন্টু। বাকী অংশেও রাখা হয় খড়ের গাদা আর সুযোগ মত রাখা হয় বাস ট্রাকসহ যানবাহন। শুধু তাই নয়, বাউন্ডারী ওয়াল না থাকায় বিদ্যালয়ের সামনের অংশ জুড়ে অঘোষিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ডে পরিনত হয়েছে। সব মিলে একমাত্র বাউন্ডারী ওয়াল না থাকায় পড়ালেখার পরিবেশটাই নষ্ট হতে বসেছে বিদ্যালয়টিতে।
বিষয়টি অনুধাবন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরে গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন তহবিলের(এডিপি) আওতায় একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। ৩ লাখ টাকা ব্যায়ে বিদ্যালয়টির বাউন্ডারী ওয়াল নির্মান প্রকল্প গ্রহন করে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতর(এলজিইডি)।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতর জানায়, ২০২০ সালের ২৪ জুন দরপত্র আহবান করে বিদ্যালয়টির বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানে ৩ লাখ টাকা ব্যায় ধরা হয়। যার কাজ পান রংপুর সদরের সরোয়ার জাহান নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ কাজটি কিনে নিয়ে সম্পন্ন করার দায়িত্ব নেন স্থানীয় ঠিকাদার মোর্শেদ। সংক্ষিপ্ত সময়ে দরপত্র আহবান করায় অর্থ বছর শেষ হওয়ার আগেই বিল উত্তোলন করতে দরপত্র আহবানের দুই দিন পরই সমুদয় বিল উত্তোলন করে বিডি করে রাখা হয়।
দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ২ আগস্ট কাজ সমাপ্ত করা কথা থাকলেও দীর্ঘ তিন বছরেও কাজ শুরুই হয়নি। এরই মাঝে ৩টি অডিটও সম্পন্ন হয়েছে উপজেলা প্রকৌশল দফতরের। কিন্তু কাকতালিও ভাবে কোন অডিটই আপত্তি জানাতে পারেনি। এ প্রকল্পের কোন ফাইলও দেখাতে পারেনি প্রকৌশল দফতর।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমেন চন্দ্র বর্মন বলেন, বাউন্ডারী ওয়াল না থাকায় একদিকে জমি জবর দখল হচ্ছে এবং ট্রাক বাস রাখায় খেলাধুলাও মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকছে। অন্যদিকে খোলা মেলা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিশেষ করে মেয়েরা শরীর চর্চায় অনিহা প্রকাশ করে।
তাই বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানের আবেদন করা হয়েছে। তিন বছর আগে প্রকল্প নিয়ে তার সমুদয় বিল পরিশোধ করলেও কাজই শুরু হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বা প্রকৌশল দফতরের কেউ আসেন নি। নিজে থেকে তিন বছর ধরে ঘুরছি, কোন কাজই হচ্ছে না। এ মাস ও মাস বলেই ৩ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। এখন নিরাশ হয়ে প্রকৌশল দফতরে যাওয়া বন্ধ করেছেন বলেও জানান প্রধান শিক্ষক।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি মোর্শেদ বলেন, কয়েক দিন কাজ করতে গিয়েছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কাজ করতে দেননি। তাই কাজটি করা হয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী নজীর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আপনার ফোনে মনে হয়েছে। তাই বিদ্যালয়টির সভাপতি স্থানীয় এমপি’র ছেলে মাহমুদুল হাসান সোহাগ সাহেবের সাথে কথা বললাম। তিনি রোববার বিদ্যালয়ে যেতে চেয়েছেন। তাকে সাথে নিয়ে গিয়ে কাজটি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়া হবে। সমুদয় বিল উত্তোলন হলেও টাকা আত্নসাৎ হয়নি। বিডি করে রাখা আছে।
তবে বিডি দেখতে চাইলেও তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিল উত্তোলন করে বিডি আকারে নিজের জিম্মায় ৩ বছর রাখার নিয়ম আছে কি না এমন প্রশ্নে কোন মন্তব্য করেন নি উপজেলা প্রকৌশলী।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, নতুন এসেছি, ৩ বছর আগের বিষয় আমার জানার কথা নয়। তবে ৩ বছরেও কাজ শুরু না হওয়া দুঃখজনক। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।