জাকারিয়া আল মামুন
একক কৌতুক অভিনয়, লোকজ সংগীত, জাদু, গান, রচনা, ও বহুবিধ সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে একসময় যোগ্যতার সাথে সংস্কৃতি অঙ্গনে বিচরণ করেছিলেন মোঃ হেলাল উদ্দিন হেলাল। ৬০এর দশকে ঐতিহ্যবাহী কালীগঞ্জের জামালপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মোড়ল পরিবারে হাসিম উদ্দিন মোড়ল এবং মাতা মোসাঃ রমিজা খাতুন এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন হেলাল উদ্দিন হেলাল। শৈশবকালেই বাবা এবং মাকে হারান তিনি। বড় ভাই,ভাবি, বোন এবং চাচা-চাচির স্নেহস্পর্শে বর হন এই কৌতুক অভিনেতা। রত্নগর্বা মা মৃত্যুবরণ করলেও আজীবন স্মরণীয় থাকবেন রমিজা খাতুন। হেলালের জন্মের তিনদিন পর তার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হেলাল উদ্দিন হেলাল।
দুঃখ, কষ্ট, বেদনায় যাহার জনম ভরা, তিনি হয়ে গেলেন কৌতুক অভিনেতা। এই কৌতুক কিসের?? শুধুই কি বিনোদন?? না! ওনার প্রতিটি কৌতুক এক একটি শিক্ষামূলক প্রতিবেদন। তিনি তার কৌতুক দিয়ে সমাজের অবক্ষয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকে সমাজের সামনে তুলে ধরতেন এবং সমাধানের চেষ্টা করতেন। পিতা-মাতা হারানোর ফলে অবহেলায়, অযতনে, দারিদ্রপীড়িত সংগ্রামমুখর জীবনে তেমন একটা লেখাপড়া করতে না পারলেও ভারতের বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা সুবোধ মুখার্জির সাহচর্যে তিনি তার কৌতুক অভিনয় শাণিত করেন। শত কষ্টের জর্জরিত জীবনের মাঝেও এই সুদর্শন পুরুষের মুখে হাসি লেগেই থাকতো। কথা এবং অঙ্গভঙ্গি দিয়ে তিনি দুঃখী মানুষের মুখেও হাসি ফুটাতে পারতেন।
৮০ থেকে ৯০ দশকে যৌতুক, শিশু অপহরণ প্রতিরোধ, এসিড নিক্ষেপ প্রতিরোধ , মাদক মুক্ত যুব সমাজ গড়া সহ একাধিক শিক্ষামূলক একক কৌতুক অভিনয় করেন এই কৌতুক শিল্পী।
সারা বাংলায় ২০০৭ সালের পূর্বে সহস্রাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর দৈত্যের হাসি ৭১ এবং আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এর অঙ্গভঙ্গি অবিকল নকল প্রদর্শন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
অভিনয় জগতে হেলালের স্বীকৃতি
৩০ শে জুলাই ১৯৯৪ ইং ঢাকা পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনে, শাহ্ মনি স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঢাকার প্রথম মেয়র হানিফ এর নিকট থেকে রুপা পদক গ্রহণ করেন হেলাল উদ্দিন হেলাল।
২৫ অক্টোবর ১৯৯৬ইং আই.পি.জি মিলনায়তন (শাহবাগ) জাগল একাডেমী “মহান স্বাধীনতা পদক ৯৫” গ্রহণ করেন শিল্পী হেলাল উদ্দিন হেলাল
৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৬ ইং গাজীপুর জেলা প্রশাসক চত্বরে আয়োজিত একক কৌতুক অভিনয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধক তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ নজরুল ইসলাম এবং প্রধান অতিথি গাজীপুর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপির কাছ থেকে মহান বিজয় দিবস সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন শিল্পী হেলাল।
৮ই জানুয়ারি ১৯৯৭ ইং জামালপুর আর.এম বিদ্যাপীঠ মাঠে তৎকালীন সংস্কৃতি ও যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন সংরক্ষিত আসনের এমপি এবং বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপির কাছ থেকে জামালপুর-বাহাদুসাদী ইউনিয়ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংস্থার পক্ষ থেকে মহান বিজয় দিবস পদক গ্রহণ করে একক কৌতুক অভিনেতা হেলাল।
১৬ই মার্চ ২০১৯ ইং কাজী বসির আহমেদ মিলনায়তন (মহানগর নাট্যমঞ্চ) গুলিস্তান, জাতীয় মানবাধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথি, তথ্য মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপির নিকট থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন এই মানবতাবাদী সংস্কৃতি কর্মী হেলাল উদ্দিন হেলাল।
সংস্কৃতিতে এবং একক কৌতুক অভিনয়ে অসংখ্য সম্মাননা পদক পেয়েও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অস্বচ্ছল সংস্কৃতি হিসেবে ভাতা প্রাপ্ত একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী মাসিক সামান্য ভাতা পেয়ে অতি কষ্টে কোনরকম বেঁচে আছেন।
দেশখ্যাতি এই কৌতুক অভিনেতা হেলাল উদ্দিন হেলাল এর সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর পূর্বে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন, ২০১১ সালে মানুষিক ও ডায়াবেটিক রোগসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বাড়িতে থেকে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। পৈত্রিকভাবে পাওয়া সোয়া ৪ শতাংশ জমির উপর একটি ছোট্ট কুটির করে পরিবার নিয়ে কোনরকম দিন যাপন করছেন তিনি। তাছাড়া আর কোন স্থাবর আস্তাবর সম্পত্তি নেই। বৈবাহিক জীবনে তিনি একটি পুত্র সন্তান ও দুটি কন্যা সন্তানের পিতা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নিকট তিনি আকুল আবেদন তার পরিবার নিয়ে ঢাকা বসবাসযোগ্য এক খন্ড জমি ও চিকিৎসার জন্য এককালীন আর্থিক অনুদানে সুদৃষ্টি কামনা করছেন। সার্বিক যোগাযোগ জন্য- ০১৭৫৬-৯৬৮২২২