গাজীপুরের কালীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত সাবেক এমপি, শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদের ৩৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পালিত হয়।
২৭শে সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আজমত উল্লাহ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আব্দুল মতিন সরকার, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আবু বকর চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শরিফ হোসেন কনক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাজেদুল ইসলাম সেলিম, আমজাদ হোসেন স্বপন, কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. রবীন হোসেন, এড. আশরাফী মেহেদী হাসান, মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মোতাহার হোসেন, সদস্য প্রার্থী মোঃ দেলোয়ার হোসেন, তাসলিমা রহমান লাভলীসহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বনানী কবরস্থানে শহীদের কবরে শ্রদ্বাঞ্জলী অর্পণ ও শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
পরে ১১টায় কালীগঞ্জ উপজেলা শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের স্মৃতিস্তম্বে শ্রদ্বাঞ্জলী অর্পণ শেষে ১২টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে উপজেলা কার্যালয়, দুপুর ২টা নোয়াপাড়া শহীদ ময়েজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এস এম আলমগীরের হোসেনের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে শাহাদাৎ বার্ষিক উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছারাও আছর বাদ কালীগঞ্জ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে ঘোড়াশাল ফেরীঘাট আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে মেহের আফরোজ চুমকি, এমপি, অংশগ্রহণ করেন। এ সময় গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
স্মরণ সভায় বক্তাগণ বলেন, ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র তথা ভাত ও ভোটের অধিকার রক্ষায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গাজীপুরের কালীগঞ্জে নেতৃত্ব দেয়ার সময় কতিপয় সন্ত্রাসী তাঁর ওপর হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদ ১৯৩০ সালের ১৭ মার্চ গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। একজন বিচক্ষণ আইনজীবি ও রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সাহসীকতার সঙ্গে তিনি এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস (বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট) সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির (এফপিএবি) মহা-সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের রক্তে সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠা প্রবল গণআন্দোলনে অবশেষে সামরিক শাসক ও শাসনের পতন ঘটে। গণতন্ত্রের জয় হয়। শহীদ ময়েজ উদ্দিন একজন দেশ প্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সাধারণ জন কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ মানুষ হিসেবে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। মুক্তি যুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গৌরবময় ভূমিকা পালন করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছেন।