ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজসেবক, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মদানকারী জাতীয় বীর শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে ২২ দল হরতালের আহ্বান করে। ওইদিন গাজীপুরের কালীগঞ্জে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মিছিলে শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ নেতৃত্ব দেন। ওই সময় কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকায় কতিপয় সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনাস্থালেই তার মৃত্যু হয়।
ময়েজউদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ও গাজীপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। এর মধ্যে সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করা হবে। এছাড়া দুপুরে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণতন্ত্র ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধি ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শহীদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা ও স্মরণ সভায় অংশ নেন— আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, দ্য ডেইলী অবজারভারের সম্পাদক সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মানিক, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া প্রমুখ।
শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ ১৯৩০ সালে ১৭ মার্চ বর্তমান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছুরত আলী, মায়ের নাম শহরবানু। তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির বাবা। ময়েজউদ্দিন আহমেদ ঐতিসাহিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করার জন্য গঠিত ‘মুজিব তহবিলের’ আহ্বায়ক ছিলেন। একজন বিচক্ষণ আইনজীবী ও রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে ওই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন।
ময়েজউদ্দিন আহমেদ উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।
রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেডক্রস (বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট) সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির (এফপিএবি) মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠা প্রবল গণআন্দোলনে অবশেষে সামরিক শাসক ও শাসনের পতন ঘটে। গণতন্ত্রের জয় হয়। শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ একজন দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সাধারণ জনকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ মানুষ হিসেবে ইতিহাসে এবং মানুষের হৃদয়পটে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গৌরবময় ভূমিকা পালন করায় বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।